২০২৫ মাইলস্টোন ট্রাজেডিঃ
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ২০২৫ সালের ২১শে জুলাই, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে। এর মাত্র ১২ মিনিট পর, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বিমানটি ঢাকার উত্তরা মডেল টাউনে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের "প্রজেক্ট-২" নামক একটি দোতলা ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ভবনটিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হতো এবং ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হতো। বিমানটি ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের সামনে আছড়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উদ্ধারकार्य শুরু করে। সংস্থাটির মহাপরিচালক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ১৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) প্রথমে ১৮ জন এবং পরে পাইলটের মৃত্যুর তথ্যসহ মোট ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর জানায়। এই ঘটনায় ১৬৪ জন আহত হয়েছেন বলে আইএসপিআর উল্লেখ করে।
নিহত পাইলটের নাম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম। আহতদের মধ্যে ৭০ জনকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়, যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানান।
রাষ্ট্রীয় শোক: বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘটনায় পরের দিন, অর্থাৎ ২২শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।
উদ্ধারকার্য: ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য মেট্রোরেলের একটি বগি রিজার্ভ রাখা হয়েছিল।
রাজনৈতিক অঙ্গন: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে।
জরুরি যোগাযোগ: দুর্ঘটনায় নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তথ্যের জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একাধিক জরুরি ফোন নম্বর চালু করা হয়। এর পাশাপাশি জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষও হটলাইন চালু করে এবং রক্তদানের জন্য আহ্বান জানায়।
অভিভাবকদের উদ্বেগ: ঘটনার পরপরই শত শত অভিভাবক তাদের সন্তানদের খোঁজে স্কুল প্রাঙ্গণে ভিড় করেন, যা এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
এই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট তৌকির ইসলাম জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের জনপ্রিয় ( অবসরপ্রাপ্ত) শিক্ষক আবুল হোসেন স্যারের ছোট মেয়ে নিঝুমের স্বামী । ৬/৭ মাস আগে তাদের শুভবিবাহ হয়।
আবুল হোসেন স্যারের বাড়ি কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চাপাত গ্রামে। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের জোড় পুকুর এলাকায় নিজস্ব বাসভবনে বসবাস করছেন।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরকে দুর্ঘটনার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচে নেওয়া হয়। মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টা যুদ্ধ শেষে অবশেষে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তৌকির ছিলেন রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের সন্তান।
0 মন্তব্যসমূহ